চীনে উচ্চশিক্ষার সম্পূর্ণ গাইড: ভর্তি থেকে স্কলারশিপ পর্যন্ত
চীনে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা ও স্কলারশিপ সুবিধা
চীনে উচ্চশিক্ষা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চীন একটি বাস্তবসম্মত ও আকর্ষণীয় পছন্দ। কারণ এখানে তুলনামূলক সহজ শর্তে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ
পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের সাংস্কৃতিক মিল থাকায় নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়াও তুলনামূলক সহজ হয়।
সাশ্রয়ী খরচে উন্নত মানের শিক্ষা এখন শুধু ইউরোপে সীমাবদ্ধ নয়; এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও চীন শিক্ষাক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। QS World University Ranking অনুযায়ী চীনের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
Peking University বর্তমানে QS র্যাংকিংয়ে ১৪তম, Tsinghua University ১৭ তম এবং Fudan University ৩০তম অবস্থানে।
এছাড়া Shanghai Jiao Tong University ৪৭তম এবং Zhejiang University ৪৯তম স্থানে অবস্থান করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা, গবেষণা সুবিধা ও ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ দিয়ে যুগের পর যুগ ধরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বাগত
জানিয়ে আসছে। তাই সঠিক তথ্য ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোতে পারলে চীনে উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চীনে পড়াশোনা বেছে নিচ্ছে মূলত উন্নত শিক্ষা, আকর্ষণীয় বৃত্তি, কম খরচ, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি, এবং এআই, রোবোটিক্সের মতো আধুনিক ও চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগের কারণে। যা তাদের কর্মজীবনের
জন্য দারুণ সুযোগ তৈরি করে। বাংলাদেশ থেকে চিনে পড়াশোনা করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে, সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো চীনের শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে খুবই মানানসই।
চীনে টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার খরচ ইউরোপ–আমেরিকার তুলনায় কম
আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় ও আধুনিক শিক্ষা সুবিধা পাওয়া যায়
অনেক কোর্স ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ বেশি
গবেষণা ও ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস পরিবেশ থাকে
ডিগ্রি শেষে বৈশ্বিক ক্যারিয়ার সুযোগ তৈরি হয়
বাংলাদেশ–চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়ক
চীনে ব্যাচেলর ডিগ্রি মূলত HSC পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী। Engineering, Business, Computer Science, International Relations এবং MBBS সহ নানা বিষয়ে ব্যাচেলর প্রোগ্রাম পাওয়া যায়। অনেক চীনা বিশ্ববিদ্যালয় এখন ইংরেজি মাধ্যমে
পড়াশোনার সুযোগ দেয়, ফলে ভাষাগত সমস্যা কম থাকে এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা সহজ হয়।
যেসব শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে ব্যাচেলর শেষ করেছেন, তারা চীনে মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে পারেন। MBA, Engineering, Public Health, Data Science ও Education-এর মতো বিষয়ে চীনে মাস্টার্স করার চাহিদা বেশ বেশি। তুলনামূলক
কম খরচে মানসম্মত শিক্ষা এবং স্কলারশিপের সুযোগ থাকায় অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এই লেভেলটি বেছে নেয়।
৩
পিএইচডি ও গবেষণা প্রোগ্রাম
চীনে পিএইচডি ও গবেষণাভিত্তিক প্রোগ্রামের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে। উন্নত ল্যাব সুবিধা, অভিজ্ঞ সুপারভাইজার এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি ফান্ডেড স্কলারশিপ পাওয়া যায়, যা গবেষণায়
আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য বড় একটি সুবিধা হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রিয় ০৬ চীনা বিশ্ববিদ্যালয়
চীনে হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বছরের পর বছর ধরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার সময় কোর্সের ভাষা, স্কলারশিপ সুবিধা এবং স্বীকৃতি বিষয়গুলো
ভালোভাবে দেখা জরুরি।
নোট: এগুলো গড় আনুমানিক হিসাব। বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্স ও স্কলারশিপের ওপর টিউশন ফি কম অথবা বেশি হতে পারে। সঠিক ও আপডেট তথ্য জানতে আজই এই নাম্বারে ০১৬১৫০০০১২৫ কল করুন করুন।
চীনে পড়াশোনার জন্য যোগ্যতা ও প্রাথমিক শর্ত
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে হলে কিছু সাধারণ শর্ত পূরণ করতে হয়। তবে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামভেদে ভিন্ন হতে পারে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার জন্য অনেক সময় IELTS প্রয়োজন হয় না, বিশেষ করে যদি আগের পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমে
হয়ে থাকে। চাইনিজ মাধ্যমে পড়ার ক্ষেত্রে HSK সার্টিফিকেট দরকার হয়।
SSC ও HSC বা ব্যাচেলর ডিগ্রির সার্টিফিকেট
নির্দিষ্ট GPA (বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন)
বৈধ পাসপোর্ট
বয়সসীমার মধ্যে থাকা
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি
চীনে পড়াশোনার আবেদন প্রক্রিয়া খুব জটিল নয়, তবে সঠিক ধাপ অনুসরণ করা জরুরি। আবেদন প্রক্রিয়া পরিষ্কারভাবে জানা থাকলে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। সব ধাপ ঠিকভাবে অনুসরণ
করলে পুরো প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে সহজ হয়।
চীনে আবেদন করার সময় কিছু সাধারণ ডকুমেন্ট প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই চায়। ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে স্ক্যান ও অনুবাদ করে জমা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট
পাসপোর্ট
স্টাডি প্ল্যান বা SOP
রিকমেন্ডেশন লেটার
মেডিকেল রিপোর্ট
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
চীনের স্টুডেন্ট ভিসা: X1 ও X2 ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত
চীনে পড়াশোনার জন্য মূলত দুই ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা দেওয়া হয়: X1 এবং X2। এই ভিসাগুলোর মধ্যে পার্থক্য হল—X1 ভিসা দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের জন্য এবং X2 ভিসা স্বল্পমেয়াদি কোর্সের জন্য।
X1 ভিসা
প্রযোজ্য: যাদের কোর্সের মেয়াদ ১৮০ দিন বা তার বেশি।
অবস্থান: মাস্টার্স, ব্যাচেলর, অথবা পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য উপযুক্ত।
বিশেষ সুবিধা: এই ভিসা প্রদান করলে শিক্ষার্থী চীনে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারেন এবং পরবর্তীতে এটি এক্সটেনশন করা যায়।
X2 ভিসা
প্রযোজ্য: যাদের কোর্সের মেয়াদ ১৮০ দিনের কম।
অবস্থান: শর্ট টার্ম কোর্স বা ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সের জন্য উপযুক্ত।
বিশেষ সুবিধা: X2 ভিসা সাধারণত কম মেয়াদের কোর্স বা একাডেমিক প্রোগ্রামের জন্য দেওয়া হয়, এবং এটি একবারে এক বছরের জন্য পাওয়া যায়।
বিঃদ্রঃ ভিসার জন্য অ্যাডমিশন লেটার এবং JW201 বা JW202 ফর্ম প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস থেকেই ভিসা আবেদন করা হয়।
চীনে স্কলারশিপ সুবিধা: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সুযোগ
চীনে পড়াশোনার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো স্কলারশিপ সুবিধা। Chinese Government Scholarship বা CSC স্কলারশিপ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এতে টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফ হয়, মাসিক স্টাইপেন্ড, আবাসন ও মেডিকেল
ইন্স্যুরেন্স পাওয়া যায়। এই স্কলারশিপগুলোর মাধ্যমে টিউশন ফি ছাড়াও মাসিক ভাতা ও আবাসন সুবিধা পাওয়া যায়।
১
সিএসসি স্কলারশিপ (Chinese Government Scholarship – CSC)
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক ও সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন স্কলারশিপ হলো চীনা সরকারি বৃত্তি, যা China Scholarship Council (CSC) পরিচালনা করে। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপের মাধ্যমে
চীনে পড়াশোনার সুযোগ পায়। সিএসসি স্কলারশিপ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে—টাইপ ‘এ’ এবং টাইপ ‘বি’।
সিএসসি স্কলারশিপের সুযোগ-সুবিধা
আবেদন ফি ও সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ফি মওকুফ
সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা
প্রথমবার চীনে যাওয়া এবং পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার বিমান টিকিট
ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর প্রয়োজন হয় না
মাসিক উপবৃত্তি:
স্নাতক পর্যায়ে প্রায় ২,৫০০ ইউয়ান
স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রায় ৩,০০০ ইউয়ান
পিএইচডি পর্যায়ে প্রায় ৩,৫০০ ইউয়ান
নোট: টাইপ ‘এ’ ও টাইপ ‘বি’ স্কলারশিপের সুযোগ-সুবিধা প্রায় একই। পার্থক্য হলো—টাইপ ‘এ’ স্কলারশিপে সাধারণত বিমান টিকিট দূতাবাসের মাধ্যমে প্রদান করা হয়, আর টাইপ ‘বি’ স্কলারশিপে বিমান টিকিট অন্তর্ভুক্ত থাকে না।
২
প্রাদেশিক সরকারের স্কলারশিপ (Provincial Government Scholarship)
চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নিজ নিজ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাদেশিক সরকারের স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। এই স্কলারশিপগুলো মূলত নির্দিষ্ট প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার জন্য দেওয়া
হয়।
প্রাদেশিক স্কলারশিপের সুযোগ-সুবিধা
টিউশন ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ
আবাসন সুবিধা (ফ্রি অথবা ভর্তুকিসহ)
কিছু ক্ষেত্রে মাসিক ভাতা
স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা
৩
বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত স্কলারশিপ
চীনের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব অর্থায়নে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। এসব স্কলারশিপ সাধারণত শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফলাফল ও প্রোফাইলের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপের সাধারণ সুবিধা
সম্পূর্ণ বা আংশিক টিউশন ফি মওকুফ
আবাসন সুবিধা
মাসিক ভাতা (কিছু ক্ষেত্রে)
স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা
সাধারণত এই স্কলারশিপ প্রথম এক বছরের জন্য প্রদান করা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে শিক্ষার্থীর একাডেমিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নের মাধ্যমে স্কলারশিপ নবায়ন করা হয়। তাই আবেদন করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত ও নিয়ম ভালোভাবে জেনে নেওয়া অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
নোট: স্কলারশিপের ধরন, সুযোগ-সুবিধা ও শর্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। সঠিক স্কলারশিপ বাছাই এবং আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করতে অভিজ্ঞ গাইডেন্স নেওয়া সবসময়ই উপকারী।
চীনে পড়াশোনার খরচ কত?
চীনে পড়াশোনার খরচ কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন হয়। তবে একটি আনুমানিক ধারণা দেওয়া যায়। ব্যাচেলর প্রোগ্রামের টিউশন ফি বছরে প্রায় ২০০০ থেকে ৪০০০ ডলার। মাস্টার্সে এটি কিছুটা বেশি হতে পারে। MBBS প্রোগ্রামের খরচ তুলনামূলক বেশি।
জীবনযাত্রার খরচ সাধারণত মাসে ২৫০ থেকে ৪০০ ডলারের মধ্যে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকলে খরচ কম হয়।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাধারণ ভুল ও সতর্কতা
চীনে পড়তে গিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হয় ভুয়া এজেন্টের ফাঁদে পড়া। অনেক সময় স্কলারশিপের শর্ত না বুঝে আবেদন করা হয়। ডকুমেন্টে ছোট ভুল থাকলেও ভিসা দেরি হতে পারে। নিজে ভালোভাবে তথ্য যাচাই করা এবং প্রয়োজনে নির্ভরযোগ্য গাইডেন্স নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ভুয়া এজেন্টে নির্ভর করা: অনেক অনভিজ্ঞ এজেন্ট ভুল তথ্য দেয় বা অতিরিক্ত ফি নেয়।
ডেডলাইন মিস করা: আবেদন ও স্কলারশিপ ডেডলাইন ভুলে গেলে সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
ভিসা ডকুমেন্ট ভুল: ভুল ভিসা ফরম বা অসম্পূর্ণ কাগজপত্র রিজেকশনের কারণ হতে পারে।
স্কলারশিপ শর্ত না পড়া: স্কলারশিপ শর্তগুলি মনোযোগ দিয়ে না পড়লে পরে ঝামেলা হতে পারে।
চীনে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের সতর্কতা:
হালাল খাবার: উইঘুর মুসলিমদের রেস্টুরেন্টে বা 'Lanzhou Lamian' এ হালাল খাবার পাবেন। 'Halal' (清真 - Qīngzhēn) লোগো দেখে নিন।
চীনে পড়াশোনার সুযোগ অনেক, কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চীনে উচ্চশিক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয় সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া। ঠিক কোন বিশ্ববিদ্যালয়
বেছে নেবেন, কোথায় এবং কখন আবেদন করবেন, স্কলারশিপ পাবেন কি না—এসব প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মাথায় আসে।
সানজেন এডু লিমিটে বাংলাদেশের সেরা বিদেশে পড়াশোনার পরামর্শদাতা সংস্থা হিসেবে, আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, বাজেট এবং লক্ষ্য বুঝে আমরা বাস্তবসম্মত পরামর্শ দিই, যাতে ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি কমে এবং চীনে
পড়াশোনার পথটা নিশ্চিন্ত হয়।
চীনে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার আগে ১০টি প্রশ্নের উত্তর জেনে রাখা ভালো
চীনে উচ্চশিক্ষা এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাস্তব ও সুযোগপূর্ণ পথ। চীনে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সঠিক তথ্য জানা খুব জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা ও বিশ্বস্ত গাইডেন্স থাকলে চীনে পড়াশোনা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাস্তব ও সফল ভবিষ্যতের পথ খুলে দিতে পারে।
১. এইচএসসির পরই কি স্নাতকের জন্য চীনে যাওয়া যায়?
অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য চীনে পড়তে আসে। চীনা ও ইংরেজি—দুই মাধ্যমেই পড়া যায়। তবে চীনা মাধ্যমে পড়তে হলে চীনা ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে, অথবা এখানে এসে ১ বছর চীনা ভাষা শিখে তারপর মূল কোর্সে প্রবেশ করতে হয়।
২. চীনে পড়তে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো স্কলারশিপ কোনটি?
চীনা সরকারি বৃত্তি (CSC) সবচেয়ে ভালো বৃত্তি, যা চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল থেকে দেওয়া হয়। এই বৃত্তির আওতায় টিউশন ফি, হোস্টেল ফি, স্বাস্থ্যবিমা সহ মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়। মাসিক ভাতা স্নাতক জন্য ৩৬,০০০ BDT, স্নাতকোত্তর জন্য ৪৩,০০০ BDT
এবং পিএইচডি জন্য ৫০,০০০ BDT।
৩. চীনা সরকারি বৃত্তির জন্য কী কী যোগ্যতা লাগে?
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যূনতম যোগ্যতা রয়েছে। সাধারণত স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি জন্য সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি প্রয়োজন। আইইএলটিএস বা চীনা ভাষার দক্ষতা পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকা দরকার।
৪. আর কী কী বৃত্তি আছে?
বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাদেশিক সরকারের স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন গবেষণা ভিত্তিক ফেলোশিপ রয়েছে। স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর সুযোগ পাওয়া যায়। এসব বৃত্তি টিউশন ফি, হোস্টেল ফি, মাসিক ভাতা সহ অনেক সুবিধা দেয়।
৫. চীনে পড়তে হলে চীনা ভাষা কি শিখতেই হয়?
চীনে পড়তে হলে চীনা ভাষা শেখাটা বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি সুবিধাজনক। চীনে আসার পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চীনা ভাষার কোর্স প্রদান করে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ সহায়ক।
৬. চীনে জীবনযাত্রার ব্যয় কেমন?
চীনে খরচ শহরের উপর নির্ভর করে। ছোট শহরগুলোতে খরচ কম, তবে বড় শহরগুলোতে বেশি। সাধারণত ১০,০০০ টাকায় খাবার খরচ চলে যায়, এবং হোস্টেল ফি ৪০০-৬০০ ইউয়ান (৬,০০০ – ৮,০০০ টাকা)।
৭. কেউ বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে খরচ কেমন?
বৃত্তি ছাড়া পড়াশোনার খরচ স্নাতক শ্রেণিতে ১৫,০০০-৫০,০০০ ইউয়ান (২২,০০০ – ৭৪,০০০ টাকা) হতে পারে। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামের খরচও তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।
৮. ঘরে বসে কীভাবে চীনা ভাষা শিখতে পারি?
ঢাবি বা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে চীনা ভাষা শেখা যেতে পারে। এছাড়া অনলাইনে ‘চায়না ব্রিজ উইন্টার ক্যাম্প’ বা ইউটিউবের মাধ্যমে চীনা ভাষা শেখা সম্ভব।
৯. পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ আছে কি?
চীনে পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সুযোগ রয়েছে, তবে প্রথম এক বছর পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া উত্তম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে খণ্ডকালীন কাজ করা যেতে পারে।
১০. চীনে পড়ালেখা করে সে দেশে চাকরির সুযোগ কেমন?
চীনে উচ্চশিক্ষা শেষে ছাত্ররা চীনা কোম্পানিতে চাকরি পেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে চীনা কোম্পানির ব্যবসা থাকায় চাকরির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে উপার্জন করতে হলে সেখানে অবস্থান করার সময় দক্ষতা বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চীনে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
চীনা স্টুডেন্ট ভিসার ফি সাধারণত ৪০০ – ৭০০ টাকা (বাংলাদেশি টাকা) মধ্যে হয়ে থাকে। তবে, এটি ভিসার ধরনের উপর নির্ভর করে, যেমন X1 বা X2 ভিসা। কিছু ক্ষেত্রে ভিসা প্রক্রিয়ায় অন্যান্য খরচ যেমন ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন এবং মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দেওয়া লাগতে পারে।
চীনে পড়াশোনা করতে চাইলে প্রথমে একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে একটি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে Admission Letter বা Offer Letter পেতে হবে। এরপর চীনা দূতাবাসে স্টুডেন্ট ভিসা (X1 বা X2 ভিসা) আবেদন করতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ভিসার শর্তাদি ভালোভাবে
যাচাই করে আবেদন করতে হবে।
985 প্রোগ্রাম চীনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বিশেষ প্রোগ্রাম, যার আওতায় চীন সরকার কিছু নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ সুবিধা ও অর্থায়ন প্রদান করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চীনের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত এবং Peking University, Tsinghua
University এর মতো বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো 985 প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত।
চীন পড়াশোনার জন্য একেবারে উপযুক্ত একটি গন্তব্য। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের শিক্ষা, কম খরচে শিক্ষার সুযোগ, এবং স্কলারশিপ সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের QS র্যাংকিং বেশ ভালো এবং উন্নত গবেষণার জন্য বিখ্যাত। চীনের শিক্ষাব্যবস্থা
ও সংস্কৃতি শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হতে পারে।
চীনে পড়াশোনা করার জন্য প্রাথমিক শর্তাবলী হচ্ছে ভালো একাডেমিক রেকর্ড, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা (যদি ইংরেজি মাধ্যমে কোর্স করেন), এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন পাসপোর্ট, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেকমেন্ডেশন লেটার ইত্যাদি।
চীনে Chinese Government Scholarship (CSC), Provincial Scholarships এবং University-specific Scholarships পাওয়া যায়। এসব স্কলারশিপ টিউশন ফি, আবাসন, স্বাস্থ্যবিমা এবং মাসিক স্টাইপেন্ড সহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে।
চীনে স্টুডেন্ট ভিসা দুই ধরনের: X1 ভিসা (দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের জন্য) এবং X2 ভিসা (স্বল্পমেয়াদি কোর্সের জন্য)। প্রাপ্ত ভিসার প্রক্রিয়া সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Admission Letter পাওয়ার পর শুরু হয় এবং সঠিক কাগজপত্র দিয়ে চীনা দূতাবাসে আবেদন করতে হয়।
X1/X2 ভিসা এর জন্য প্রয়োজন: Admission Letter, JW201 Form, পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদসহ), ছবি, ভিসা ফর্ম, ব্যাংক স্টেটমেন্ট (কিছু ক্ষেত্রে), মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইত্যাদি।
চীনে পড়াশোনার খরচ আন্তর্জাতিকভাবে তুলনামূলক সাশ্রয়ী। টিউশন ফি প্রতি বছর সাধারণত ২,০০,০০০ – ৫,০০,০০০ টাকা হতে পারে, এবং জীবনের খরচ আনুমানিক ২৫,০০০ – ৪০,০০০ টাকা প্রতি মাসে হতে পারে।
চীনে স্টুডেন্ট ভিসায় সাধারণত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পার্ট-টাইম কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়, তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম এবং ভিসার শর্তের উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে কাজ করা যেতে পারে।
চীনে পড়াশোনা করার পর বাংলাদেশে অনেক চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ব্যবসা, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি, এবং স্বাস্থ্য খাতে। চীনের শিক্ষা ও গবেষণা ব্যবস্থার সাথে পরিচিতি থাকলে স্থানীয় বাজারে আপনাকে একধাপ এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।